ইনামুল হক, বসিরহাট: এবছরের
মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষায় পাশের হারে একশো শতাংশ ছাত্রীই সফল। বসিরহাটের খাদিজাতুল কুবরা বালিকা এতিমখানা ও মাদ্রাসা এমনই সাফল্যের নজির গড়ে নজর কেড়ে নিয়েছে শিক্ষা মহলের। বসিরহাটের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া সাকচুড়ার দক্ষিণ ওলাইচন্ডির খাদিজাতুল কুবরা বালিকা এতিমখানা ও মাদ্রাসার পড়ুয়াদের এই সাফল্যে খুশি সকলে। প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বৈদ্য জানান, আলিমের মোট পরীক্ষার্থী ৮৬ জনই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। একই সাফল্য ফাজিলেও। ৭৮ জন ছাত্রী পরীক্ষায় বসে সকলেই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। আলিমে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে মহিমা খাতুন। প্রাপ্ত নম্বর ৭৭৮ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে তসলিমা খাতুন প্রাপ্ত নম্বর ৭৪৯ এছাড়া সকল ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ নম্বর নিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই খুশি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবক অভিভাবকারাও। প্রধান শিক্ষক আরো জানান, অল ইন্ডিয়া সুন্নাত ওয়াল জামাত এর পরিচালনায় এই মাদ্রাসাটি মূলত দুস্থ ও এতিম বালিকাদের জন্য যাকাত ও আর্থিক দানের সহায়তায় চলে। ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাথে বিজ্ঞানকেও গুরুত্ব দিয়ে আমাদের ছাত্রীদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ারও স্বপ্ন দেখাই। সেজন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানে থেকে পড়াশোনা করলেও পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সরকারি স্কুল ও মাদ্রাসাগুলিতে আমাদের ছাত্রীরা ভর্তি আছে। সেখান থেকেও তারা পঠন পাঠন ও অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। এক কথায় এতিম অভাবী হলেও তাদের প্রতি সমান নজর দিয়ে সমাজের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এখানকার মোট ছাত্রীর সংখ্যা ১১৩০ তার মধ্যে এবারে মাধ্যমিক সমতুল (আলীম) পরীক্ষায় বসেছিল ৮৬ জন। পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক সমতুল (ফাজিল) পরীক্ষা দিয়েছিল ৭৮ জন ছাত্রী। প্রত্যেক ছাত্রীই উচ্চ নম্বর পেয়ে সফল। সাফল্যের শীর্ষে থাকা মহিমা খাতুন, তাসলিমা খাতুনরা জানায়, আমাদের কারোর হয়তো বাবা নেই, কারোবা মা নেই। কারোবা দুজনেই কেউই নেই। আবার অনেক অভাবী পরিবারের মেয়ে হিসেবে এখানে ভর্তি হয়েছে। পরিবারের পিতৃ-মাতৃস্নেহ পেয়ে এরা সকলেই প্রতিপালিত হচ্ছে। পাশাপাশি কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী বা অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছে। সব মিলিয়ে সাধারণ স্কুলের মত উচ্চ স্বপ্ন নিয়ে খাদিজাতুল কুবরা গার্লস এতিমখানায় থেকে পড়াশোনা করছে মহিমা খাতুনরা। মহিমা জানায় সে ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হতে চায়। তসলিমা খাতুন জানায় সে একজন সমাজসেবী হয়ে সমাজের দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য কাজ করবে। আর তাদের এইসব স্বপ্নকে সফল করে তুলতে নিজেদের কন্যা স্নেহে শিক্ষাদানে আন্তরিকভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এখানকার শিক্ষক শিক্ষিকারাও।