দেবশ্রী মজুমদার, নানুর: মানুষ কী খাবে, কী পরবে নিদান দেবেন প্রধান মন্ত্রী। প্রধান মন্ত্রী বলছেন, যারা মাছ খান। তারা হিন্দু বিরোধী। এখানে উপস্থিত আপনারা বেশিরভাগ মাছ খান। ডিম খান। মাংস খান। আর তাহলেই হিন্দু বিরোধী? মানুষ মাছ খাবে, না ডিম খাবে, তা ঠিক করে দেবে বিজেপি। মানুষ ফুলকপি খাবে, না বাঁধাকপি খাবে তা ঠিক করবে বিজেপি? বলছে, এক দেশ, এক নির্বাচন। তাই এই স্বেচ্ছাচারী সরকারকে উৎখাত করতে হবে। এদিনের সভায় প্রার্থী অসিত মাল ছাড়াও, জেলা সভাধিপতি, মন্ত্রী, দলীয় বিধায়করা উপস্থিত ছিলেন। বোলপুর লোকসভায় সাতটি বিধান সভার মধ্যে বীরভূমের চারটি বিধান সভা পড়ে। তার মধ্যে শুধু মাত্র নানুর বিধান সভার লোকজন ছিল এই সভায়। তাতেই প্রায় বিশ হাজার লোক। সেখান থেকে প্রায় তিরিশ কিমি দূরে প্রধান মন্ত্রীর সভা ভিড়ের পরিসংখ্যানে সেটা ফিকে পড়ে যায় এদিন।
নানুরের পাপুড়ি আল আমিন মিশন মাঠে জন গর্জনে বিজেপি সরকারের বিসর্জনের ডাক দিলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন অভিষেক বলেন, ” বোলপুর শান্তিনিকেতন কবিগুরু নামের সমার্থক। ফলক থেকে রবীন্দ্রনাথের নাম মুছে দেয় বিজেপি। বাঙালি নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিশ দেয় বিজেপি। তাই আমরা বিজেপিকে বাংলা বিরোধী বলি। স্বামী বিবেকানন্দকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, অজ্ঞ বামপন্থী পণ্ডিত। তাই বিজেপিকে বাংলা বিরোধী বলি। কোলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে বিজেপি। তাই তাদের আমরা বাংলা বিরোধী বলি। বাংলার মানুষের হকের বাড়ির, কাজের, রাস্তার টাকা আঁটকে রাখে, তাই বিজেপিকে বাংলা বিরোধী বলি।
এদিন তিনি বলেন, গরমে আপনাদের কষ্ট দিতে সাতদফায় ভোট করেছে দিল্লি। দু’দফায় মানুষ ওদের মাথা ভেঙেছে। তৃতীয় দফার পর চতুর্থ দফায় আপনারা কোমর ভাঙবেন। ভোট বাক্স খোলার সময় পদ্মফুলের বাবুরা চোখে সর্ষেফুল দেখবেন। আড়াই মাস আমি রাস্তায়। মানুষের চোখের ভাষা আমি পড়েছি। কেন্দ্রে এই সরকার থাকবে না। নতুন সরকার গঠন হবে। আর তাতে তৃণমূল কংগ্রেস অগ্রণী ভূমিকা নেবে।
এদিন তিনি বলেন, এপ্রিল মাস থেকে আপনারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছেন। আজ তিন তারিখ ব্যাঙ্কে চেক করে নেবেন। দেখবেন বর্ধিত ভাতা আপনাদের একাউন্টে ঢুকে গেছে। মায়েরা কারা কারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকা পান হাত তুলবেন।হাত তুলতেই, সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার ছবি তুলতে হবে না। এই হাজার হাজার মহিলাদের হাত তোলা ছবি তুলে প্রধান মন্ত্রীকে পাঠিয়ে বলুন। এরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পান। তৃণমূল সরকার যতদিন থাকবে, এই টাকা বন্ধ করা তো দূরে থাক, এর দিকে বাঁকা চোখে চাইতে কেউ পারবে না।
মঞ্চ থেকে বিজেপির নেত্রীর ভয়েস রেকর্ড শুনিয়ে তিনি বলেন, তিন মাসের মধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবে। এর বিরুদ্ধে কোনো বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শোকজ বা কোনো ব্যবস্থা নিল না। তার অর্থ সোজা। এটাই বিজেপি চায়। এই লোকসভায় একজন বিজেপি প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। প্রচারে এলে তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এব্যাপারে তাদের অবস্থান কী? তবে আমি আশ্বস্ত করে যাচ্ছি, যতদিন মমতা সরকার থাকবে, আপনারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাবেন।
কেন্দ্র যতই বৈমাত্রেয় সুলভ আচরণ করুক, উন্নয়নের অশ্বমেধের ঘোড়া কেউ আঁটকাতে পারবে না। আপনারা দেখেছেন। একশো দিনের কাজের এক লক্ষ পঁয়ষট্টি হাজার টাকা আঁটকে রাখে কেন্দ্র। তার প্রতিবাদে দিল্লিতে অবস্থান বিক্ষোভ করে আমাদের সাংসদরা। আমাদের মহিলা সাংসদদের চুলের মুঠি ধরে তুলে দেয় অমিত শাহর পুলিশ। কিন্তু কেন্দ্র না দিলেও, মমতা সরকার ফেব্রুয়ারি মাসে তিন লক্ষ উনিশ হাজার সাতশো ষাট জনকে বকেয়া টাকা মিটিয়েছে। প্রধান মন্ত্রী বড়ো বড়ো কথা বলছেন। একশো দিনের কাজে দশ পয়সা বাংলাকে দিলে তার শ্বেত পত্র প্রকাশ করুন।
বিজেপি বাংলায় হারার পর আবাসের খাতে এক পয়সা দেয় নি। তবে মমতা সরকার চলতি বছরে একত্রিশে ডিসেম্বরে বাড়ির প্রথম কিস্তির টাকা মমতা সরকার দেবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, চতুর্থ দফার ভোট দেওয়ার আগে সবাইকে একবার ভেবে দেখতে বলেন-এগারো সালের আগে সিপিএমের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে আপনাদের পাশে এই বিজেপি বা কোনদল আসে নি। শুধু তৃণমূল কংগ্রেস ছিল। মনে করবেন, দুই হাজার সালে সূচপুর গণহত্যায় এগারোজন কৃষক হত্যার কথা। প্রধান মন্ত্রী আজ ভাষণ দিচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ বলবেন শেষ কথা।