পুবের কলম প্রতিবেদক: ‘ভোট বড় বালাই’। বহু শ্রুত এমন কথাও হয়তো নির্বাচনী বন্ডের ‘দাপটে’ মুখ লুকিয়ে ফেলবে লজ্জায়! যে জনগণ দেবেন ভোট, খোদ তাঁদের সঙ্গেই এ ভাবেও করা যায় ‘ছলনা’! এ ভাবে উপেক্ষা করা যায় তাঁদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত স্বার্থ? এমনই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী তহবিলে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অন্তত ৩৫টি ওষুধ সংস্থার দেওয়া প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে। এই ঘটনার জেরে এই রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর তরফে বুধবার জানানো হয়েছে, এই ‘অন্যায়ে’র বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে ডেপুটেশন দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে আইনের দ্বারস্থ হবে এই সংগঠন।
এ দিন এই সংগঠনের তরফে এমনই জানানো হয়েছে, এ দেশে কোনও মানুষের চিকিৎসার জন্য যে টাকা খরচ হয়, সেই টাকার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ খরচ হয় শুধুমাত্র ওষুধের জন্য। চিকিৎসা করাতে গিয়ে এ দেশের ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যান। এই রকম অবস্থার মধ্যে এ দেশের বাজারে রয়েছে নিম্নমানের এবং ক্ষতিকর ওষুধ। গোটা বিশ্বে এই সব ক্ষতিকর ওষুধের বৃহত্তম বাজার হিসাবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে এই দেশ। আর, এই দেশেই নির্বাচনী তহবিলে ঘুর পথে ভোট সর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ‘ঘুষ’ দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের কমপক্ষে ৩৫টি বড় মাপের ওষুধ সংস্থার ‘অসাধু’ ব্যবসার লাইসেন্সকে পাকাপোক্ত করে দেওয়া হল।
সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী তহবিলে অন্তত ৩৫টি বড় মাপের ওষুধ সংস্থার দেওয়া টাকার অংক প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর সভাপতি ডাক্তার দুর্গাপ্রসাদ চক্রবর্তী এবং সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার সজল বিশ্বাস এ দিন যৌথভাবে বলেন, ‘শাসকদল সহ অন্য কয়েকটি ভোট সর্বস্ব বড় রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছে অন্তত ৩৫টি নামীদামি ওষুধ কোম্পানি। এর বিনিময়ে ওই কোম্পানিগুলির বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ যা সরকারি ল্যাবরেটরির গুণমান পরীক্ষায় ফেল করেছিল, সেই সব ওষুধকে ছাড়পত্র দিয়েছে সরকার।’
তা হলে, সাধারণ মানুষ এখন কী করবেন, ওই সব ওষুধ কি আর ব্যবহার করবেন তাঁরা? ডাক্তাররা কি প্রেসক্রাইব করবেন ওই সব ওষুধ? ডাক্তার সজল বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের দেশে ওষুধের গুণমান পরীক্ষার তো পরিকাঠামোই তেমন নেই। এর ফলে কী করে জানা যাবে ঠিক কোন ওষুধগুলি ব্যবহার করা যাবে না? ফলে অজান্তেই মানুষ ওই সব ওষুধ খাচ্ছেন। ডাক্তাররাও লিখেছেন। অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এই ঘটনা। এর জন্য সরকারই দায়ী।’
সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের তরফে এ দিন এমনই সব অভিযোগ আনা হয়েছে:
(১) নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ঘুরপথে ‘ঘুষে’র বিনিময়ে নিম্নমানের এবং ক্ষতিকর ওষুধ চড়াদামে বাজারে বিক্রি করার সুযোগ করে দেওয়া হল ওই সব ওষুধ সংস্থাকে।
(২) ইতিমধ্যেই ওষুধের বাজারমূল্য বিনিয়ন্ত্রণ করে দিয়েছে সরকার। এর ফলে ওষুধের বাজারমূল্য এখন আগুন ছোঁয়া। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দেওয়া ওই ‘ঘুষে’র বিনিময়ে ওই ওষুধ সংস্থাগুলি এর পর ওষুধের দাম আরও বহুগুণ বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে গেল। এর ফল সাধারণ মানুষকে ভুগতে হবে।
(৩) এতদিন ওষুধের বাজারমূল্য বৃদ্ধির পিছনে ওষুধ সংস্থাগুলি ডাক্তারদেরকে যে ‘উপঢৌকন’ দিত, তাকেই বেশি করে দেখানো হত। নির্বাচনী বন্ডের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় প্রমাণিত হল ওষুধের দাম বৃদ্ধির জন্য কোন প্রকৃত কারণ রয়েছে।