পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: বাজল ভোটের ঘণ্টা। শনিবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার, নির্বাচনী আধিকারিক জ্ঞানেশ কুমার ও সুখবীর সিং সান্ধু ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন। এবার মোট সাত দফায় লোকসভা নির্বাচন হচ্ছে ৫৪৩ আসনে। বাংলার পাশাপাশি বিহার ও উত্তরপ্রদেশে ৭ দফায় ভোট হচ্ছে। আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে ভোট। চলবে ১ জুন পর্যন্ত। মোট ৪৭ দিন ধরে চলবে ভোটপর্ব। ফল ঘোষণা হবে ৪ জুন। ২২ রাজ্যে এক দফাতেই ভোট গ্রহণ করা হবে। ২ দফায় ভোট হবে ৪ রাজ্যে, কর্নাটক, ত্রিপুরা, মণিপুর ও রাজস্থানে। ৩ দফায় ভোট হবে অসম ও ছত্তিশগড়ে। ৪ দফায় ভোট ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডে। ৫ দফায় ভোট মহারাষ্ট্র ও জম্মু-কাশ্মীরে। ৭ দফায় ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে। রাজীব কুমার বলেন, আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে ভোট পরিচালনা করা। এবার ৯৭ কোটি ভোটার রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৯.৭ কোটি পুরুষ ও ৪৭.১ কোটি মহিলা। নতুন ভোটার ১.৮২ কোটি। নির্বাচনী আধিকারিক ও কর্মী ১.৫ কোটি। ১০০ বছরের বেশি বয়স এমন ভোটারের সংখ্যা ২.১৮ লক্ষ। এবার মহিলা ভোটার ৯৭ শতাংশ বেড়েছে। ট্রান্সজেন্ডার ভোটারের সংখ্যা ৪৮ হাজার। ১০ লক্ষ ৫০ হাজার ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ইভিএম থাকছে ৫৫ লক্ষ। ৮৫ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটারদের কাছে ফর্ম পৌঁছে দেওয়া হবে। তারা বুথে না আসলে, বাড়ি গিয়ে ভোট গ্রহণ করা হবে। ১৬ জুন শেষ হচ্ছে চলতি লোকসভার মেয়াদ।
২৬ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই। বিহার, গুজরাত, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, হিমাচলপ্রদেশ, কর্নাটক, তামিলনাড়ুতে উপনির্বাচন বাকি। সেগুলিতে লোকসভার সঙ্গেই ভোট হবে। ২২ রাজ্যে এক দফাতেই ভোট গ্রহণ করা হবে। ২ দফায় ভোট হবে ৪ রাজ্যে, কর্নাটক, ত্রিপুরা, মণিপুর ও রাজস্থানে। ৩ দফায় ভোট হবে অসম ও ছত্তিশগড়ে। ৪ দফায় ভোট ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডে। ৫ দফায় ভোট মহারাষ্ট্র ও জম্মু-কাশ্মীরে। ষষ্ঠ দফায় ভোট হবে উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার। ৭ দফায় ভোট হবে পঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশায়। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোট। এই দফায় পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, লক্ষদ্বীপ, আন্দামান নিকোবার, বিহার, সিকিম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অসম, অরুণাচলপ্রদেশ-সহ ২১ রাজ্যে ভোট।
দ্বিতীয় দফায় ভোট ২৬ এপ্রিল। কেরল, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর, অসম, মণিপুর, ত্রিপুরায় ভোট হবে এই দফায়। তৃতীয় দফায় ভোট ৭ মে। এই দফায় জম্মু ও কাশ্মীর, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ছত্তিশগড়, গোয়া, দাদরা-নগর হভেলি ও দমন-দিউ’তে ভোট হবে।
চতুর্থ দফার ভোট হবে ১৩ মে। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ডে এই দফায় ভোট হবে। পঞ্চম দফার ভোট হবে ২০ মে। লাদাখ, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও মহারাষ্ট্রে এই দফায় ভোট হবে। ষষ্ঠ দফার ভোট হবে ২৫ মে। এই দফায় দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায় ভোট হবে। সপ্তম দফার ভোট হবে ১ জুন। এই দফায় হিমাচলপ্রদেশ, পঞ্জাব, চণ্ডীগড়, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায় নির্বাচন হবে। এ দিকে, লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই জারি হয়ে গেল আদর্শ আচরণবিধি।
এ দিন রাজনৈতিক দল তথা নেতাদের জন্য একাধিক বিধিনিষেধ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। তারা বলেছে, ভোটপ্রচারে কোনও উসকানিমূলক মন্তব্য করা যাবে না। ভোটপ্রচারে ধর্মকে ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারে শিশুদের ব্যবহার করা যাবে না। কোনও বিনামূল্যে উপহার দেওয়া চলবে না। টাকা, মদ, শাড়ি, প্রেসার কুকারের মতো জিনিস দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করলেই কড়া পদক্ষেপ। জিএসটি-র মাধ্যমে নজর রাখা হবে যেকোনও পণ্যের হঠাৎ চাহিদা বাড়ছে কি না। বিমানবন্দরে কড়া নজরদারি।
যে রাজ্যে হেলিকপ্টার অবতরণ করে, সেখানেও চেকিং হবে। রেল ও সড়কপথেও কড়া নজরদারি চালানো হবে। নির্বাচনে যাতে রক্তগঙ্গা না বয় সেদিকে কড়া নজর রাখা হবে। অভিযোগ পেলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তেমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের। প্রার্থীর অপরাধের ইতিহাস বা ক্রিমিনাল ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে, তাঁকে তিনবার সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক দলকেও জানাতে হবে, কেন অপরাধের ইতিহাস থাকা কাউকে প্রার্থী করা হল, অন্য কাউকে কেন প্রার্থী করা হল না। ফেক নিউজ তৈরি করা যাবে না। এবারের নির্বাচনে নয়া নিয়ম, রাজ্যের হাতে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ডিলিট করার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে মাইক, লাউড স্পিকারের ব্যবহার। ভোটের সময় বঙ্গবাসীকে নিরাপত্তা দিতে রাজ্যে মোতায়েন করা হবে ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। জম্মু ও কাশ্মীরের থেকেও বেশি সংখ্যক বাহিনী বাংলায় মোতায়েন করা হবে।