পুবের কলম প্রতিবেদক: ডান চোখ আর নাকের মাঝের অংশ থেকে বেলুন ফাটানোর বন্দুকের গুলি বের করতে দেরি হলে, গোটা জীবনের জন্য ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যেতে পারত চার বছরের এক শিশুকন্যার। তবে, এমন অঘটনের আশঙ্কা তৎপরতার সঙ্গে রুখে দিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকরা। আর, তার জেরেই খুশির হাওয়া এখন বইছে ওই শিশুকন্যা এবং তার পরিবারে। খুশি চিকিৎসকরাও।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চার বছরের এই শিশুকন্যা অদ্রিজা বর্ধমানের বাসিন্দা। গত সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ মামার সঙ্গে মেলায় সে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটানোর সময়, আচমকা ওই বন্দুকের সামনে চলে আসে এই শিশুকন্যা। তখনই ঘটে বিপদ। ওই বন্দুকের গুলি ছুটে এসে বিঁধে যায় অদ্রিজার ডান চোখ এবং নাকের মাঝের অংশে। তবে শুধু বিঁধে যাওয়া নয়, এই শিশুকন্যার ডান চোখ এবং নাকের মাঝের ওই অংশে দুই সেন্টিমিটার ভিতরেও ঢুকে যায় দুই সেন্টিমিটার লম্বা ওই গুলিটি। ফলে, বাইরে থেকে গুলিটি দেখা যাচ্ছিল না। ওই স্থান থেকে শুধুমাত্র রক্তপাত হচ্ছিল।
এই অবস্থায় ভয়ের কারণে বাড়িতে ফিরে আসার পরেও তারা কিছু জানায় না। কিন্তু ডান চোখ আর নাকের মাঝের ওই অংশে কী হয়েছে, রক্ত বের হচ্ছে কেন, এমন সব প্রশ্নের জবাবে বলা হয় মেলায় পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছে অদ্রিজা। এর পর যন্ত্রণা বাড়তে থাকলে ওই দিন সন্ধ্যা নাগাদ গোটা ঘটনার বিষয়টি তার মাকে জানায় এই শিশুকন্যা। তার বাবা তখন স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে তাকে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। পরের দিন ভোরে এই শিশুকন্যাকে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চলে আসেন তার মা-বাবা।
কলকাতার এই সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। এবং, অবশেষে বুধবার অপারেশন করে এই শিশুকন্যার ডান চোখ আর নাকের মাঝের অংশ থেকে বেলুন ফাটানোর বন্দুকের ওই দুই সেন্টিমিটার লম্বা গুলিটি বের করেন চিকিৎসকরা। এখানকার ইএনটি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর চিকিৎসক দীপ্তাংশ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল এই অপারেশন করে। এই দলে ছিলেন চিকিৎসক অমিত শুক্লা, চিকিৎসক শ্রীতা সরকার এবং চিকিৎসক প্রদ্যম্না কুণ্ডু।
চিকিৎসক দীপ্তাংশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ডান চোখ ও নাকের মাঝের ওই অংশ থেকে বেলুন ফাটানোর বন্দুকের গুলি বের করতে দেরি হলে এই শিশুর ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি গোটা জীবনের জন্য হারিয়ে যেতে পারত।’ কথায় এমন বলে, সব ভালো যার শেষ ভালো। এই চিকিৎসক বলেন, ‘অপারেশনের পর এই শিশুকন্যা এখন বিপদ থেকে মুক্ত।’