পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সন্দেশখালি (Sandeshkhali) কাণ্ডে শেখ শাহজাহানের (Arrested TMC leader Shahjahan Sheikh) ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত। তদন্তের ভার নিল সিআইডি। সন্দেশখালি ঘটনার ৫৬ দিনের মাথায় গ্রেফতার হলেন সন্দেশখালি কাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড, তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। বুধবার রাতে মিনাখাঁর বামুনপাড়ার গোপন আস্তানা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার সকাল ১০.৪০ নাগাদ বসিরহাট আদালতে পেশ করা হয়। পুলিশ ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়েছিল। আদালত সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখকে (Arrested TMC leader Shahjahan Sheikh) ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। এদিন বসিরহাট আদালতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
তবে এদিন শাহজাহানকে গ্রেফতারের পরেই সন্দেশখালির ৪৯টি জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বেতাজ বাদশাহর গ্রেফতারের পরেই সন্দেশখালি ঘোজাপাড়ায় উৎসবের মেজাজ। স্থানীয়রা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিলি করেন।
বেশ কয়েকদিন ধরে শেখ শাহাজাহানের (Arrested TMC leader Shahjahan Sheikh) গ্রেফতারি নিয়ে উত্তাল হয় রাজ্য-রাজনীতি। সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর যৌন নিপীড়ন এবং জমি দখলের অভিযোগে সরব হয় স্থানীয় মানুষ। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শেখকে তার মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারণ সে লোকেশন পালটে পালটে থাকছিল।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, এই কয়েকদিন ধরে পুলিশের কাছে কমপক্ষে ১০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। মানুষের বিক্ষোভের একটাই দাবি ছিল শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি। তার বিরুদ্ধে আইপিসি ধারা ৩৭৬ডি (গণধর্ষণ) এবং ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) এর অধীনে মামলা করা হয়েছে। শেখের অপর দুই অনুগামী শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সরদারকে একই মামলায় আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। জমি দখলের অভিযোগে তার আরেক সহযোগী অজিত মাইতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, শাহজাহানের বিরুদ্ধে সব থেকে বড় অভিযোগ হচ্ছে জোর করে জমি কেড়ে নেওয়া সহ মহিলাদের উপর নির্যাতন।গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে শেখ শাহজাহানের বাড়ি আকুঞ্জিপাড়ায় অভিযান চালায় ইডি। কিন্তু সেই সময় সাধারণ মানুষের হেনস্থার মুখে পড়েন ইডি আধিকারিকরা। তারা চড়াও হয় আধা সামরিক বাহিনীর উপরেও। মারধর করা হয় সাংবাদিকদেরও। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় সন্দেশখালি। কিন্তু তার পরবর্তীতে পরিস্থিতির পট পরিবর্তন হয়। সেই শাহজাহানের বিরুদ্ধেই তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে গ্রেফতারির দাবিতে সরব হয় স্থানীয় মানুষ।
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকদিন ধরেই তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান কেন গ্রেফতার হচ্ছে না, তা নিয়ে সরব হয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। গ্রেফতারি প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তোলে বিরোধীরা। শাহজাহানের গ্রেফতারের সময়টি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মার্চে বাংলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আগেই শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হল।
শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, কিছু আইনি জটিলতার কারণে তাকে প্রাথমিকভাবে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে হাই কোর্ট শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে কোনও স্থগিতাদেশ নেই বলে স্পষ্ট করার পরে, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। কুণাল বলেন, বিরোধীরা আগেই শাহজাহানের গ্রেফতারির নিষেধাজ্ঞাকে কাজে লাগিয়েছে। আমরা আগেই বলেছিলান সাতদিনের মধ্যে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হবে, কারণ রাজ্য পুলিশের উপর আমাদের আস্থা আছে’।
এদিকে বিরোধী শিবিরের দাবি স্থানীয়দের আন্দোলনের চাপের মুখে গ্রেফতার করা হয়েছে শেখ শাহাজাহানকে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, এটি ছিল এতদিন তৃণমূল এবং রাজ্য পুলিশ অপরাধীকে রক্ষা করেছিল। তবে ভা্লো চিত্রনাট্য গল্পের অংশ হিসাবে শেখ শাহাজাহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে. আমাদের নেতৃত্বে লাগাতার আন্দোলনের কারণে রাজ্য প্রশাসন তাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে’।
হাই কোর্টের নির্দেশের আবহে সোমবার রাতে শাহজাহানের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য সরকারের কাছে বিশদে বিবরণ জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেন।। দুষ্কৃতীরা একটি শিশুকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগের ঘটনা তদন্তের রিপোর্টও জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।