বিশেষ প্রতিবেদন: ভারতে নবায়নযোগ্য শক্তি বা সবুজ শক্তির সরবরাহ বাড়ছে। নবায়নযোগ্য বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির (পুনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তি এমন একটি শক্তি যা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া থেকে উৎপাদিত হয় এবং অবিচ্ছিন্নভাবে প্রকৃতিতে পুনরায় পূরণ হয়ে যায়) ক্ষমতার দিক থেকে শীর্ষ ভারতীয় রাজ্যগুলি হল রাজস্থান, গুজরাত, তামিলনাড়ু, কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্র। চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের পরে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ধারণ করার ক্ষমতায় ভারত চতুর্থ স্থানে এবং চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে নবায়নযোগ্য শক্তির আকর্ষণে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
ভারতের উৎসের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে দেশটি একটি গুরুতর বায়ু দূষণের সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে। ভবিষ্যত জনসংখ্যার শক্তির চাহিদা মেটাতে হলে ভারতকে অ–নবায়নযোগ্য সম্পদের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে এবং সবুজ শক্তি উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে হবে।
শক্তি ক্ষেত্র গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের একটি প্রধান উৎস। এইভাবে, শক্তির প্রচলিত উৎসের (যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি, ইউরেনিয়াম) উপর নির্ভরতা হ্রাস এবং শক্তি বা সবুজ শক্তির পরিবেশবান্ধব উৎসগুলিতে যাওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির মতে সবুজ শক্তি হল বায়ু, সূর্য, জৈব পদার্থ,ভূ–তাপীয় বা জিওথার্মাল (পৃথিবীর অভ্যন্তরে তাপ), বায়োগ্যাস (ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা উদ্ভিদ/প্রাণীর দেহাবশেষ পচনের ফলে উৎপাদিত গ্যাস), এবং কম–প্রভাবযুক্ত ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প (বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে চলমান জলের প্রাকৃতিক প্রবাহের ব্যবহার)।
বিজ্ঞানীদের মতে ভবিষ্যতে তাপমাত্রার আরও বৃদ্ধি বড় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যা তৈরি করবে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উল্লিখিত কিছু সমস্যা হল খরা, বনের দাবানল, বরফ গলে যাওয়া, মহাসমুদ্র/সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, বন্যা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ঘুর্ণিঝড়ের ঘটনা। এগুলোর প্রতিটিই মানুষের জীবনকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করছে।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনে সূর্যের ভূমিকা বছরের পর বছর ধরে হ্রাস পেয়েছে, এবং বিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং সেইসঙ্গে অন্যান্য পরিবেশ–অবান্ধব মানব ক্রিয়াকলাপ। এগুলি পরিবহণ (মোটর গাড়ি), শিল্প (বিদ্যুৎ কেন্দ্র), পরিকাঠামো (রাস্তা, জল, স্যানিটেশন), আবাসিক (বিল্ডিং গরম করা এবং ঠান্ডা করা) খাতে শক্তির ব্যবহার, এবং বন উজাড় ও ভূপৃষ্ঠের জলাশয়ের দূষণের ফলে পরিবেশের ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত।
জীবাশ্ম জ্বালানির ক্রমাগত ব্যবহার কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করছে, যা বায়ুমণ্ডলে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই অবস্থায় সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি/তাপ পর্যাপ্তভাবে মহাকাশে প্রতিফলিত হয় না। পরিবর্তে, বায়ুমণ্ডলে গ্যাসগুলি (জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে উৎপাদিত) বেশিরভাগ তাপ শোষণ করে এবং পৃথিবীর সমস্ত দিকে বিকিরণ করে, যার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটে।
ভারত, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, অনেকগুলি সবুজ উদ্যোগ শুরু করেছে এবং এর নির্গমন র্যা ঙ্কিং উন্নত করার লক্ষ্য রেখেছে। এটি বর্তমানে চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পরে চতুর্থ বৃহত্তম বৈশ্বিক নির্গমনকারি দেশ। লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে অ–জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শক্তি সংস্থান থেকে ৫০ শতাংশ শক্তি অর্জন করা এবং ২০৭০ সালের মধ্যে নেট শূন্যে পৌঁছনো।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমন কমাতে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নেট শূন্যে (অর্থাৎ শূন্য নির্গমনের কাছাকাছি) পৌঁছনোর জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
শিল্পোন্নত দেশগুলিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশমন ও অভিযোজন, এবং স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলিকে জলবায়ু অর্থায়ন হিসাবে বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে বলা হয়েছে। যদিও বেশিরভাগ দেশ এই প্রস্তাবগুলি রূপায়ণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আজ অবধি শুধুমাত্র কয়েকটি দেশ আংশিকভাবে তা মেনে চলেছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জ ক্রমশ বেশি করে উদ্বিগ্ন, কারণ কিছু দেশ (যেমন ব্রিটেন) তাদের জলবায়ু লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করেছে, এবং তার কারণ হল তারা নেট শূন্যে পৌঁছনোর পরিবর্তে শক্তি নিরাপত্তা (উপলব্ধ সম্পদ থেকে) পছন্দ করছে। ভারতের বিভিন্ন অংশে গৃহস্থালি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সবুজ শক্তি উৎপাদনের (প্রধানত সৌরশক্তি) অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। সবুজ শক্তি উৎপাদনে ভারতের অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় কিছুটা এগনো সম্ভব হয়েছে। ২০২২ সালের শেষে সরকার পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে ১৬৮ গিগাওয়াট বা ৪০ শতাংশ শক্তি উৎপাদনের প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতা তৈরির গুরুত্ব স্বীকার করেছে।
জীবাশ্ম জ্বালানি এখনও শক্তি খরচে প্রাধান্য পায় এবং তা প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার প্রায় ৬০ শতাংশ। প্রতি বছর ৮৫ শতাংশ তেল ও ৪৫ শতাংশ গ্যাস আমদানি করা হয়। নগরায়ণ, পরিবহণ পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ এবং শিল্প উৎপাদনের ফলে উদ্ভূত ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটানোর চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
ভবিষ্যৎ জনসংখ্যার শক্তির চাহিদা যদি দায়িত্বশীলভাবে মেটাতে হয়, ভারতকে অবশ্যই অ–নবায়নযোগ্য সম্পদের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে, এবং সবুজ শক্তি উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে হবে। এই পদ্ধতির জন্য অংশীদারদের সহযোগিতা, সবুজ উদ্যোগের আরও ভালো বাস্তবায়ন, নির্মিত সবুজ সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ, জনগণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের এবং দক্ষ বিকল্পের সুযোগ এনে দেওয়া, এবং মানুষের অভ্যাস ও মনোভাবের পরিবর্তন প্রয়োজন।