দেবশ্রী মজুমদার,শান্তিনিকেতন : ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলার ঐতিহ্যগত চরিত্র, এই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির পরাজয় হলে ভুল হবে। ব্যক্তিগত ইমেইল মারফত এক চিঠিতে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন এবং মেয়ে অন্তরা দেব সেনকে জানালেন নোবেলজয়ী ভারতরত্ন অমর্ত্য সেন। দেশের বাইরে থাকলেও, শত ব্যস্ততার মধ্যে দেশের বিভিন্ন ইস্যু বা সমস্যা নিয়ে তিনি ভাবেন এবং সে বিষয়ে তাঁর সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেন।
বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র স্মরণ করিয়ে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন ভিবিউফা সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে চিঠি দেন ভারত রত্ন তথা নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। বর্তমানে তিনি বিদেশে। সেই একই চিঠি তিনি তাঁর কন্যা অন্তরা দেব সেন সহ অন্যান্যদেরও ইমেইলে পাঠান।
চলতি বছরের এগারো তারিখে ইমেইলে নোবেলজয়ী বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে বাংলার অটুট ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র এবং তা রক্ষা করা নিয়ে তাঁর চিন্তা প্রকট করেছেন।
তিনি বলেন, “বাংলার প্রধান ইস্যু ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপক্ষে রুখে দাঁড়ানো। প্রয়োজন শক্তিশালী প্রতিরোধ। বাংলার ধর্মনিরপেক্ষতার দীর্ঘ ঐতিহ্য থাকা সত্বেও তা সব সময় হয়ে ওঠে না। ধর্ম ভিত্তিক বিভাজন রহিত নিরপেক্ষ রাজনীতির প্রয়োজন বাংলার। ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতিকে পরাজিত হতে দেওয়া হবে একটি ভুল। বাংলার একতার চরিত্র আমাদের হারালে চলবে না। আমি আমার দাদু ক্ষিতিমোহন সেনের কথা ভাবছিলাম। তিনি বুঝিয়ে বলতেন, হিন্দু মুসলিম ঐক্যের গুরুত্ব প্রাথমিকভাবে পরস্পরকে সহ্য করা নয়। গুরুত্বটা তার থেকেও অনেক বেশি। বরং বলা যায় গুরুত্বটা হলো একসঙ্গে কাজ করার। যেটা ঐতিহাসিক ভাবে হয়ে এসেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে- প্রাচুর্যময় সাহিত্য, প্রধান স্থাপত্য, বিরল কারুকার্য এবং অসংখ্য যৌথ সৃজনশীলতায়।”
জানা গেছে, মোদির পদবি তুলে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে গত বছর ২৩ মার্চ গুজরাটের একটি আদালত রাহুলকে দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিল। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সংসদ পদ বাতিল করা হয়। সেই সময়ও অমর্ত্য সেন বিদেশ থেকে সরব হন। সেই সময় পঁচিশে মার্চের এক চিঠিতেও তিনি ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ভারতের গণতন্ত্র কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে?
বিরোধী দলনেতা কোনো প্রতিবাদ করতে পারবেন না? একজন “মাইনর জ্যুডিশিয়াল অফিসার” তাঁকে সরিয়ে দিতে পারবেন!। এভাবেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বিচার ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র বিরোধিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অমর্ত্য সেন।