পারিজাত মোল্লা: বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এক মামলার শুনানি পর্বে ব্যারাকপুর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো।কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও মহম্মদ সাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে তীব্র ভর্ত্সিত বারাকপুরের সিপি অলোক রাজোরিয়া সহ তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ।
ব্যারাকপুরের টিটাগড়ের একটি খুনের মামলায় বিচারপতি সংশ্লিষ্ট এলাকার সিপিকে প্রশ্ন করেন, ‘তদন্তে গাফিলতি কেন? আদৌ কি খুনের তদন্ত করছিলেন?’ এদিন শুনানি পর্বে বিচারপতি কটাক্ষ করে বলেন, ‘রাজ্যে এমন সিপি ও এই ধরণের তদন্তকারী অফিসার থাকলে তদন্তের অবস্থা কী হবে?যা তদন্ত করছেন প্রত্যেককে পুলিশ মেডেল দেওয়া উচিত্।
রাজ্যের গর্ব তো আপনারা!” আদালত সুত্রে প্রকাশ, গত বছরের ২৩ জুন খড়দহ থানা এলাকার টিটাগড়ের লক্ষ্মীঘাট এলাকার এক নিহতের ঘটনা ঘিরে এই মামলা। বাড়ি ভাড়ার টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বচসার জেরে আহত হন বাড়ির গোবিন্দ যাদব। গুরুতর আহত অবস্থায় গোবিন্দকে প্রথমে বিএন বোস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরিস্থিতি গুরতর হওয়ায় পরে তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু ওইদিনই মৃত্যু হয় গোবিন্দর।
হাসপাতালের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে খুনের মতো আঘাতের কথা উল্লেখ থাকে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, -‘খুনের ধারা যোগ করেনি খড়দহ পুলিশ’।। বুধবার এই মামলারই শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে।বিচারপতি এদিন ব্যারাকপুর সিপিকে প্রশ্ন তোলেন, “কেন খুনের ধারা রুজু করা হয়নি?” বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ মৃতের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে।
ওই রিপোর্টে খুনের মতো আঘাতের কথা উল্লেখ থাকলেও ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার বদলে শুধুমাত্র ৩০৪ নম্বর অর্থাত্ অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা যোগ করা হয়। কেন সেটা করা হল? তা নিয়েই বিস্ময় প্রকাশ করে আদালত। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানায় “তদন্তের গাফিলতির দায় এড়াতে পারেন না সিপি।
লঘু ধারা দেওয়ার কারন কী? অভিযুক্তদের হেফাজতে রেখে সিবিআই জেরা হওয়া উচিত্।” এদিন ব্যারাকপুর সিপি-র তরফে আইনজীবী সওয়াল করে জানান, -‘চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। তদন্তকারী অফিসারের গাফিলতি রয়েছে, তদন্ত করা হচ্ছে’। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানায় -‘ অবস্থা এমন হয়েছে যে প্রদর্শনীর সামগ্রীর মতো করে কমিশনারকে পেশ করতে হচ্ছে, । সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত এবং সবাইকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত’।
কোন সাফাই দেবেন না। আর একটা কথা বললে আগামীকাল রাজ্যের ডিজিকে হাজিরার নির্দেশ দেব। রাজ্যের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন বিচারপতি। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, -‘ পুলিশ সরাসরি খুনের ধারা যুক্ত না করে অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারায় মামলা রুজু করে থাকে ‘।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে জামিন চাইতে আদালতে আসে এক অভিযুক্ত।রাজ্যের দাবি, -‘তারা খুনের ধারা যুক্ত করার আবেদন নিম্ন আদালতে জানাতে চলেছেন’। গত মঙ্গলবারই ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কমিশনার অলোক রাজোরিয়া এবং তদন্তকারী আধিকারিককে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। সেইমতন বুধবার হাজির ছিলেন দুই পুলিশ আধিকারিক।তদন্তের গাফিলতির দায়ে এদিন দুই পুলিশ অফিসার ডিভিশন বেঞ্চে ভৎসনার মুখে পড়েন।