পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: সামনেই লোকসভা ভোট। তবে ভোটের দিন ঘোষণার অনেক আগেই সিএএ’র রুল জারি হয়ে যাবে। এমনটাই দাবি করেছেন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটের অনেক আগেই ‘নাগরিকত্ব (সংশোধিত) আইন-২০১৯’-এর নিয়ম ও বিধি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাবে।
কেন্দ্রের মোদি সরকারের করা এই আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো দেশগুলি থেকে আসা অ-মুসলিমদের (হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রিস্টান) ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, যারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে এসেছে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সংসদে পাস হয় সিএএ। তাতে রাষ্ট্রপতির তরফে সম্মতিও দেওয়া হয়েছে।
শুধু বিধি তৈরির অপেক্ষা ছিল। সংসদে বিল পাস হওয়ার ৪ বছর পরও কেন সিএএ’র বিধি তৈরি হচ্ছে না তা নিয়ে অনেক রাজনৈতিক দলও প্রশ্ন তুলে ছিল। তাদের বক্তব্য ছিল-কেন্দ্র ভয় পেয়ে গিয়েছে। তাই বিলম্ব করছে। বিজেপির আসল উদ্দেশ্য সিএএ’র জুজু দেখিয়ে ভোটে ফায়দা তোলা। যদিও সেইসময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, করোনার প্রকোপ কমলেই সিএএ’র বিধি লাগু করা হবে। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই আধিকারিকের এদিনের মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘আমরা শীঘ্রই সিএএ-র জন্য রুল জারি করতে যাচ্ছি। একবার বিধি জারি হয়ে গেলে আইনটি কার্যকর করা হবে। তখন এই আইনে প্রতিবেশি দেশগুলি থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া যাবে।’
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে লোকসভা ভোট হতে পারে। কেন্দ্রের ওই আধিকারিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণার আগে সিএএ’র রুল কি জারি করা সম্ভব হবে? জবাবে ওই আধিকারিক বলেন, ‘হ্যাঁ, তার অনেক আগেই হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, নিয়ম ও বিধিগুলি প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। অনলাইন পোর্টালটিও রয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে হবে। এই আইনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের ঘোষণা দিতে হবে যে, তারা কোন সময়ে ভ্রমণের নথি ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করেছিল। তবে এজন্য আবেদনকারীদের কাছ থেকে কোনও নথি চাওয়া হবে না।
সম্প্রতি, কলকাতা সফরে এসেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্যত হুমকি দিয়েছিলেন যে, সিএএ হচ্ছে দেশের আইন। কেউ এটি আটকাতে পারবে না। প্রসঙ্গত, সংসদীয় নিয়ম অনুসারে সংসদে বিল পাসের পর তা আইনে পরিণত করতে হলে রাষ্ট্রপতির সম্মতির প্রয়োজন। আর রাষ্ট্রপতির সম্মতির ৬ মাসের মধ্যে সেই আইনের বিধি তৈরি করা দরকার।
কিন্তু, ২০২০ সাল থেকে সিএএ’র বিধি তৈরির ব্যাপারে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সংসদীয় কমিটিগুলি থেকে নিয়মিত সময় বাড়িয়ে চলেছিল। যদিও গত ২ বছরে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে ৩০টির বেশি জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯টি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ২০২১-২২ অর্থবর্ষের প্রতিবেদন অনুসারে, ১ এপ্রিল, ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত–পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আসা মোট ১,৪১৪ জন অ-মুসলিমকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।