পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: প্রায় দুই বছর ধরে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। থামার লক্ষণ নেই। দিন দিন আরও প্রকট হয়ে উঠছে। বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় এবং রুশ সেনা পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্ক ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ করছে। হাড় কাঁপানো কনকনে শীত ও তুষার ভেজা কর্দমাক্ত মাঠে যুদ্ধ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই সেনাদের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। এর ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে ইঁদুরের উপদ্রব। ছোট-বড় লাখ লাখ ইঁদুরে ছেয়ে গেছে পুরো অঞ্চল।
ব্রিটেনের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সহকারী অধ্যাপক টাইলার বলেছেন, কোনো কোনো ইঁদুরের আকার আস্ত একে-৪৭ রাইফেলেরও সমান। যাদের উৎপাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সেনারা। ইঁদুরগুলো সেনাদের জুতো, এমনকি অস্ত্রের মধ্যেও আস্তানা করছে। তাদের খাবার নিয়েও করছে টানাটানি। প্রাণীগুলো শুধু উপদ্রবেই থেমে নেই। ছড়িয়ে দিয়েছে নয়া এক আতঙ্কও- ইঁদুর জ্বর। যার প্রকোপে কাঁপছে রুশ সেনারা।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, ইউক্রেনে রুশ সেনাদের মধ্যে ব্যাপকহারে ইঁদুর-জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। চলতি বছর ইঁদুর অস্বাভাবিকহারে ইউক্রেনে বংশবিস্তার করেছে। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে প্রাণীগুলো সেনা ঘাঁটি, ট্যাংক এবং অস্ত্রের ভেতর আশ্রয় নিচ্ছে। ফলে বিপদে পড়েছে সেনারা। কারণ গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রসহ হিটার, মজুত করা খাবার, ইন্টারনেট যন্ত্রাংশের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র নষ্ট করছে। ইঁদুর জ্বরের প্রভাবও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। তীব্র মাথাব্যথা, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত জ্বর, ফুসকুড়ি এবং লালভাব, নিম্ন রক্তচাপ, চোখে রক্তক্ষরণসহ নানাবিধ অসুস্থতায় ভুগছে। তাদের শরীরে ইঁদুর থেকে সংক্রমিত হওয়া হান্টা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রধান গোয়েন্দা অধিদপ্তর, কুপিয়ানস্কে রাশিয়ার ইউনিটগুলোর মধ্যে তথাকথিত ইঁদুর জ্বরের প্রাদুর্ভাবের কথা জানিয়েছে। ইউক্রেন সেনাবাহিনীর এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীতকালীন পোশাকের অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা-যত্নের অভাবের কারণে ইউক্রেনে থাকা রুশ সেনাদের মধ্যে ইঁদুর জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে।
ইউক্রেন গোয়েন্দা বিভাগ আরও দাবি করেছে, প্রথমদিকে এ রোগের প্রাদুর্ভাবকে উপেক্ষা করেছিলেন রুশ কমান্ডাররা। রাশিয়াকে সতর্ক করার সময় বিষয়টিকে একটি অজুহাত হিসাবে দেখছিল রাশিয়া। যুদ্ধ এড়াতেই ইউক্রেন সেনারা ইঁদুর জ্বরের কথা জানিয়েছে। এমনটিই অভিযোগ করেছিল রুশ সেনারা। পরিস্থিতি এখন মারাত্মক হয়ে উঠেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি পুতিন প্রশাসন।
রোগটি ইঁদুরের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। ইঁদুরের কামড় অথবা মলের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। যেসব অঞ্চলে এদের মল থাকে সেখানকার বাতাসে এ রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে শ্বাস নিলেই ঘটে বিপদ। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে নিমিষেই মানুষের শরীরে এ জীবাণু ঢুকে পড়ে। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, স্বাভাবিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, বমি, মাথাব্যথা, পেশি ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা বা ফুলে যাওয়া এবং ফুসকুড়ি। রোগটি কিডনিকেও প্রভাবিত করে।