পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ মন ভাল নেই অসমের যুব সম্প্রদায়ের। স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে শারীরিক শাস্তি ভোগ করা থেকে শুরু করে বাড়ির অভিভাবকদের মারধর, সবমিলিয়ে মানসিক অসুস্থতা বাড়ছে। এখানেই শেষ নয়, প্রাইভেট টিউশন থেকে খেলার মাঠ সেখানেও নিগৃহীত হতে হচ্ছে। আর সবথেকে বেশি হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিশেষ করে ফেসবুকে। এই সবে মিলিয়ে অসমের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের ৯৫ শতাংশই মানসিক রোগী হয়ে পড়েছে।
সমীক্ষা বলছে, বিজেপিশাসিত অসমের যুব সম্প্রদায়ের ৯৫ শতাংশই মানসিক অসুখে ভুগছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের হাল খুবই খারাপ।ইউনিসেফ ও ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিম (এনএসএস) -এর সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়ার কারণে এই মানসিক অসুস্থতা তৈরি হয়েছে।
পাশাপাশি, স্কুল-বাড়ি-টিউশন-খেলার মাঠে শারীরিক নিপীড়নের কারণেও এমন বিপুল হারে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অসমের কিশোর ও যুব সম্প্রদায়।২০১১-র সেনসাস অনুযায়ী, অসমের ৩.১ কোটি জমসংখ্যার ১৯ শতাংশেরই বয়স ১৫-২৪ বছরের মধ্যে। সমীক্ষায় ৬০ শতাংশের অভিযোগ, এই মানসিক বিপন্নতা তাদের সামাজিক সম্পর্কে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
অন্যদিকে, ২৪ শতাংশ জানিয়েছে, তীব্র মানসিক চাপের কারণেই তাদের মনের স্বাস্থ্য রুগ্ন হয়ে পড়ছে। এই ধরনের মানসিক অসুস্থতা তাদের উপর তীব্র চাপ তৈরি করছে।তাদেরকে আরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে এবং তারা ক্রমশ ভীত হয়ে পড়ছে। আর ১৭ শতাংশ জানিয়েছে, অন্যের আক্রমণের শিকার হয়ে শারীরিক আঘাতের কারণে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাইতে চালু হয়েছে ইউ-রিপোর্ট সমীক্ষা। শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ধরন ও প্রতিকার নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অসম স্টেট কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটসের তরফে ‘সুরক্ষা’ নামের যে স্কিম নেওয়া হয়েছে তাকে সাহায্য করতেই এই ইউ-রিপোর্ট তৈরি করা হয়। ইউ-রিপোর্ট হল ইউনিসেফের তৈরি করা একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। যেখানে তরুণ-তরণীরা এসএমএস, ফেসবুক ও ট্যুইটারের মাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। রবিবার তারা তাদের সমীক্ষা রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে।
গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিথিলি হাজারিকা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সাইবার বুলিং খুব সাধারণ একটা বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ, ডিজিটাল স্পেসে তরুণদের উপস্থিতি যথেষ্ট বেড়েছে। কিছু ক্ষেত্রে যুব সম্প্রদায়কে আত্মহত্যার দিকেও ঠেলে দিচ্ছে। হাজারিকা আরও বলেন, এই মানসিক অসুস্থতার কারণে বাড়ছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, ক্ষমতাহীনতার অনুভূতি, উদ্বেগ, হতাশা এবং একাকীত্ব। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী (ভিকটিম) মনে করে থাকে যে, এটি তারই দোষ। যা তাদের মানসিক সমস্যার দিকে পরিচালিত করে। এজন্য প্রথমেই যেটা করতে হবে তা হল সমস্যার কথা প্রথমেই পরিবারের কাছে খুলে বলতে হবে ভুক্তভোগীকে। প্রয়োজনে আইনি সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সমাজকর্মী তথা কাউন্সিলর অর্চনা বোরঠাকুর জানান, সাইবার অপরাধের শিকার হওয়াও তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলছে। এজন্য তাদের উচিত অবিলম্বে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া। আইনি পরামর্শ নেওয়া।
প্রসঙ্গত, ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৯,৫০০ ছাত্র-ছাত্রী এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলড হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক নিগ্রহর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে, যুব সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০ শতাংশ অনলাইনে অপরিচিতর হাতে হয়রানির শিকার হয়েছে। ১২ শতাংশ সহপাঠীর হাতে ও ১৪ শতাংশ বন্ধুর হাতে নিগৃহীত হয়েছে বা হয়রানির শিকার হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু ফেসবুকেই হয়রানির শিকার হয়েছে ৩৬ শতাংশ আর ইনস্টাগ্রামে ২৫ শতাংশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা, বিব্রতকর ও অশ্লীল ছবি ও ভিডিয়ো ছড়ানো এর বড় কারণ। সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে, যুব সম্প্রদায়ের ৩৫ শতাংশ বাড়িতে শারীরিক শাস্তি ভোগ করেছে। ২৫ শতাংশ শারীরিক শাস্তি ভোগ করেছে স্কুলে আর প্রাইভেট টিউশন ও খেলার মাঠে নিগৃহীত হয়েছে ১৪ শতাংশ।আর এই তিন ক্ষেত্রেই হেনস্থার শিকার হয়েছে ২৬ শতাংশ। অসম রাজ্য ইউনিসেফের এক কর্তা জানান, যুব সম্প্রদায়ের এই মানসিক অসুস্থতা রাজ্যের পক্ষে এখন বড় বিবদ। সবাইকে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতে হবে যুব সম্প্রদায়ের মন ভাল রাখার জন্য।