বিশেষ প্রতিবেদন: ১৫ মে, ১৯৪৮ সাল। ফিলিস্তিনিদের জন্য দিনটি অবমাননা ও বিপর্যয়ের। আরবি শব্দ ‘নাকবা’-র বাংলা তরজমা করলে দাঁড়ায় ‘বিপর্যয়, দুর্ঘটনা ও দুর্ভাগ্য’। ৭৫ বছর আগে এদিন ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়। তাদের ভূখণ্ড দখল করে ও তাদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে ইসরাইল নামের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির লড়াই চলছে। যায়নবাদী শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে সেই প্রতিরোধ ও যুদ্ধ আজও জারি। নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার এই আন্দোলন চললেও বিশ্বের উদাসীনতা ফিলিস্তিনকে কুরে কুরে খাচ্ছে। যায়নবাদী ইসরাইল পশ্চিমাদের সহায়তায় ফিলিস্তিনিদের গণহারে হত্যা করে চলেছে। আর এই হত্যাযজ্ঞ দেখেও নীরব থাকছে রাষ্ট্রসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সংস্থা। ইসরাইলকে বিচারের আওতায় আনার মতো কোনও সংগঠন বা জোট নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নাকবা। নাকবা দিবসে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে নিউ ইয়র্ক. ডাবলিন ও ভিয়েনার মতো শহরে। পশ্চিমা মিডিয়াকে একে ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংঘাত হিসেবে দেখিয়ে থাকে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলেন, নাকবা দিয়ে মূলত ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের ওপর জাতিগত নিধন বোঝানো হয়। ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও তাড়িয়ে দিতে ৭০টিরও বেশি গণহত্যা চালিয়েছে যায়নবাদীরা। প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ ফিলিস্তিনিকে বসতবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ইসরাইল নামের একটি রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল।
১৯৪৭ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায়। তখন থেকেই তারা ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে বাধ্যতামূলকভাবে ফিলিস্তিনকে ভাগ করে দেওয়া হয়। তখন মধ্যপ্রাচ্যের সীমান্তকে নতুন করে নির্ধারণ করে রাষ্ট্রসংঘ ও বিশ্বশক্তিগুলো। কিন্তু এই পরিকল্পনায় সাধারণ মানুষের মতামত গ্রাহ্য করা হয়নি। ফিলিস্তিনের মধ্যেই একটি ইহুদি রাষ্ট্রের ভিত্তি ধরে ১৯৪৭ সালের ২৭ নভেম্বর রাষ্ট্রসংঘে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। প্রস্তাবটি পাস হওয়ার আগে ইহুদিদের ভূমি ছিল মাত্র ছয় শতাংশ। জনসংখ্যায় ফিলিস্তিনিরা ছিলেন ৬০ শতাংশ ও ইহুদিরা ৩২ শতাংশ। কিন্তু ভূখণ্ড ভাগ হওয়ার সময় ইহুদিদের দেওয়া হয় ৫৫ শতাংশ, ফিলিস্তিনিদের ৪৫ শতাংশ, আর তিন শতাংশ থাকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে।
নাকবায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও আট লক্ষ বাস্তুচ্যুত হন। ৪১৮টি গ্রাম ও শহরে জাতিগত নিধন চালানো হয়। আর দেড় লক্ষ ফিলিস্তিনি নিজ ভূখণ্ডের মধ্যেই বাস্তুচ্যুত হন। ৭৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ইহুদিদের হাতে। ফিলিস্তিন থেকে যেসব মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা আর কখনও নিজ ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারেননি। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের বংশধররা গাজা, পশ্চিমতীর ও বিভিন্ন দেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার ৭৪ শতাংশ বর্তমানে শরণার্থী হিসাবে জীবন যাপন করছেন।