উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,কুলতলি : সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেল, গত ৮ মাসে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে ১১ জন আহত হন। তার মধ্যে ৯ জন মারা যায়। গত ১৫ দিনে ২ জনের মৃত্যু ঘটেছে বাঘের আক্রমনে। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরতে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। আর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও মৃত মৎস্যজীবী পরিবারেরা সরকারি ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। কেন সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা বিকল্প কর্মসংস্থান পাবে না সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।আর তাঁর মাঝেই মৃত্যু মিছিল চলছে সুন্দরবনে।এবার সুন্দরবনের কুলতলিতে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হল এক মৎস্যজীবীর। মৃতের নাম শ্রীদাম হালদার (৪৬)।
মৃত মৎস্যজীবীর বাড়ি কুলতলি থানার গোপালগঞ্জ পঞ্চায়েতের গায়েনের চক গ্রামে।স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, কুলতলির গোপালগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের গায়েনের চকের বাসিন্দা মৎস্যজীবী শ্রীদাম হালদার বিশ্বজিত জানা,হাসান মোল্লা প্রদীপ সরখেলের নৌকা নিয়ে গত ৭ ই ফেব্রুয়ারী কুলতলি থেকে সুন্দরবন জঙ্গলের নদী খাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন।গত প্রায় ৬ দিন ধরে তারা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরছিলেন।সোমবার ভোর ৬ টা নাগাদ সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরছিলেন। সেই সময় সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে একটি বাঘ শ্রীদাম হালদারকে টার্গেট করতে থাকে।
এদিকে চার মৎস্যজীবি আনমনে নদীতে কাঁকড়া ধরার দ্রোণ ফেলতে ব্যস্ত।আচমকা সুন্দরবন জঙ্গল থেকে দ্রুত গতিতে বাঘ বেরিয়ে আসে।মুহূর্তে সকলের অলক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে শ্রীদামের ঘাড়ে।ঘাড় মটকে তাকে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।বাঘ তার শিকার নিয়ে একটু গভীর জঙ্গলের দিকে যেতেই শ্রীদামের সঙ্গীরা বাঘের কবল থেকে শ্রীদামকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যায়।গাছের ডাল ভেঙে বাঘের পিছু নিয়ে তাড়া করে তাঁরা।বাঘ তাঁর শিকার ছাড়তে নারাজ।
রুদ্রমূর্তি ধরে বাঘ মৎস্যজীবীদের সামনে রুখে দাঁড়ায়।দীর্ঘ প্রায় ঘন্টাখানেক চলে বাঘে মানুষের লড়াই। অবশেষে মৎস্যজীবীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে বাঘ শিকার ছেড়ে গর্জন করতে করতে পিছু হটতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে এক সময় বাঘ ভয় পেয়ে দৌড়ে সুন্দরবনে গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যায়। আর শ্রীদামের সঙ্গী মৎস্যজীবীরা বাঘের কবল থেকে সঙ্গীকে উদ্ধার করে নৌকায় তোলেন।
ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ওই মৎস্যজীবি। সোমবার বেলায় মৃত মৎস্যজীবীর দেহ নিয়ে ফেরে সঙ্গী সাথীরা।মঙ্গলবার মৃতদেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয় বলে পুলিশ সুত্রের জানা গেল । অন্যদিকে মৃত মৎস্যজীবীর বাড়িতে ৭০ বছরের বৃদ্ধ মা,স্ত্রী ১০ বছরের প্রতিবন্ধী এক মেয়ে ও ৭ বছরের এক মেয়ে সহ চার কন্যাসন্তান আছে ।
এমন মর্মান্তিক ঘটনায় হালদার পরিবার সহ সমগ্র গায়েনের চক এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বন দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে এক মৎস্যজীবীর মৃত্যু ঘটেছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় মঙ্গলবার ।
আর মৃত মৎস্যজীবী পরিবারের হাতে দ্রুত সরকারি ক্ষতি পূরণের টাকা তুলে দেওয়ার দাবি জানালেন এপিডিআর সংগঠনের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সহ সম্পাদক মিঠুন মন্ডল। তিনি বলেন, বারবার একই ঘটনা ঘটে চলেছে।বিকল্ল কর্মসংস্থান না থাকায় সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা জঙ্গলে চলে যায় রোজগারের আশায়। তাই তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দিকে সরকারের নজর দেওয়ার দরকার। পাশাপাশি এদের মৃত্যুর পরে ক্ষতিপূরণ নিয়ে সরকারের টালবাহানা করলে চলবে না। দ্রুত তাদের পরিবারের হাতে ক্ষতি পূরণের টাকা তুলে দিতে হবে।
কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পরে কুলতলির এক মৎস্যজীবীর পরিবার শান্তিবালাদেবী ছাড়া আর কোনও মৎস্যজীবী পরিবার এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পায়নি।আর তাই দ্রুত ক্ষতিপূরণ দাবি জানালাম।