পুবের কলম ওয়েবডেস্ক:আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সেনাদের মধ্যে সোমবার রাতের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের প্রায় ১০০ সেনা নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯ জন আর্মেনিয়ার এবং ৫০ জন আজারবাইজানের বলে জানা গেছে। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন, আজারবাইজানের সঙ্গে সোমবার রাতভর সংঘর্ষে তাঁর দেশের ৪৯ জন সেনা নিহত হয়েছে। পার্লামেন্টে ভাষণে তিনি বলেন, রাতভর আর্মেনিয়ার অবস্থানে হামলা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে আজেরি প্রতিরক্ষামন্ত্রক জানিয়েছে, ওই সংঘর্ষে তাদেরও ৫০ জন সেনা নিহত হয়েছে। আর্মেনিয়ার উপ-বিদেশমন্ত্রী ভাহে গেভরগিয়ান অভিযোগ করেছেন, শুধু সীমান্তেই নয়, আর্মেনীয় ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে ‘বড় আকারের সামরিক অভিযান’ চালিয়েছে বাকু। বলেন, তাঁর দেশের সামরিক স্থাপনা এবং অসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে আজারবাইজান। এ দিকে বাকুর দাবি, আর্মেনীয় সেনায় নাগার্নো-কারাবাখের আজেরি অঞ্চলে সেনা ঘাঁটিতে প্রথমে হামলা চালিয়েছে। সেই হামলার জবাব দিয়েছে আজারবাইজান। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান। এ ছাড়া ফরাসি প্রেসিডেন্ট এম্যাক্রোঁ এবং মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। অন্যদিকে, আর্মেনিয়াকে সীমান্তে উসকানি বন্ধের আহ´ান জানিয়েছে এ অঞ্চলের প্রভাবশালী দেশ এবং আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্ক। সোমবার রাতের ওই সংঘর্ষের পর তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকারের সঙ্গে কথা বলেছেন আজেরি প্রতিরক্ষামন্ত্রী জাকির হাসানভ। হুলুসি আকার বলেন, তুরস্ক সব সময় ভ্রাতৃপ্রতিম আজারবাইজানের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতেও দেশটির ন্যায্য দাবিদাওয়ার বিষয়ে আঙ্কারা পাশে থাকবে। তুরস্কের বিদেশমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, ‘আর্মেনিয়ার উচিত উসকানি থামানো এবং আজারবাইজানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ও সহযোগিতার প্রতি মনোনিবেশ করা।’ ইতিমধ্যে সীমান্তে দু’পক্ষকেই পরিস্থিতি শান্ত করার আহ´ান জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। রাষ্ট্রসংঘের মুখপাত্র স্তিফান দুজারিচ বলেন, ‘আমের্নিয়া-আজারবাইজান সীমান্তে সংঘর্ষ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মহাসচিব গুতেরেস।’ আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ´ান জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ।
কী নিয়ে বিরোধ?
আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে বিতর্কিত নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চল। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত অনুযায়ী এটি আজারবাইজানের অংশ, তবে সেখানে থাকে মূলত জাতিগত আর্মেনিয়ানরা। এ নিয়েই দুই দেশের এলাকা দখলের যুদ্ধ চলছে বহু বছর ধরে। ধর্মীয় বিভেদও দুই দেশের মধ্যে দ্ব¨µ তৈরি করছে। আর্মেনিয়া খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, অন্যদিকে আজারবাইজান মূলত মুসলিম। দু’টি দেশই প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে বড় আকারে যুদ্ধ হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালেও দুই দেশ ছয় সপ্তাহ ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।